নিজ বদলীর আদেশ ঠেকাতে অধস্থন সরকারি কর্মচারী ও অনুগতদের দিয়ে মানববন্ধনের নামে মাঠে নামালেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা।
এডিবি ও রাজস্ব’র টাকা আত্মসাৎ, সাংবাদিকদের হত্যার বিচার দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন বন্ধ করতে পুলিশ পাঠানো, ছাগল কান্ডে নারীর সাথে অশৌজন্যমুলক আচরনসহ নানা অভিযোগে ইউএনও প্রীতম সাহার বিরুদ্ধে নানা সময় সংবাদ প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
গত সোমবার প্রীতম সাহাকে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সংযুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে। সরকারি এই আদেশ পাওয়ার পরপরই ইউএনও প্রীতম সাহা বদলি ঠেকাতে মাঠে নামেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে দিয়ে তার পক্ষে দেনদরবার চালান। সেটা করতে না পেরে বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মচারীদের মাঠে নামান।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকাল ৫ টায় গাংনী উপজেলা পরিষদের সামনের রাস্তায় এই মানববন্ধন করানো হয়।
মানবন্ধনে গাংনী ভুমি অফিসের অফিস সহকারী সাজাহান, উপজেলা পরিষদের অফিস সহায়ক বাইতুল্লাহ, গাংনী উপজেলা পূজা উৎযাপন কমিটির সাধারন সম্পাদক শুশান্ত কুমার পাত্র, বাঁশবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্টাফসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকর্মী অংশ নেন। এসময় বক্তব্য রাখেন, গাংনী পুজা কমিটির সভাপতি সুশান্ত কুমার পাত্র, গাংনী পৌর বিএনপির ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সুলেরী আলভী, সাহিবুল ইসলাম এবং ধানশিড়ির মালিক মালশাদহ গ্রামের বশির আহমেদ।
উল্লেখ্য, প্রিতম সাহা গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকেই স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পক্ষ নিয়ে গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। তার নির্দেশে গাংনী উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ভোট চুরি করে নৌকা মার্কার প্রার্থীকে বিজয়ী করার অভিযোগ রয়েছে।
এর আগেও ২ বার প্রিতম সাহার বদলির আদেশ দিয়েছিলে মন্ত্রণালয়। তবে প্রতিবারই তিনি নানা মহলে তদবির করে বদলির আদেশ ঠেকিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সদ্য পতিত আওয়ামী সরকার পতনের আগ পর্যন্ত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের উপর তার নির্দেশে হামলা চালানো হয়েছিল। বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং স্বৈরাচার সরকারের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছেন। এদিকে জেলা প্রশাসক ইকোপার্ক পাঁচ বছরের ইজারা থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা আয় হলেও সেই টাকা লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা পরিষদের গাড়ী বর্তমানে বন্ধ থাকলেও গাড়ির তেল উত্তোলন করা হয় প্রতি মাসে।
প্রীতম সাহার দায়িত্বে অবহেলার কারনে গাংনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলেও ইটভাটা মালিক সমিতির কাছ থেকে প্রতি বছর মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে অবৈধ ভাটাগুলি পরিচালনা করার অনুমোদন দিয়েছিলেন তিনি।
কৃষকরা জানান, ইউএনও প্রীতম সাহা সদ্য অপসারিত গাংনী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেকের সাথে আঁতাত করে ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহন করেন। এরপর তিনি ২০২১-২২ অর্থবছরে “সমন্বিত ব্যবস্থাপনা কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি প্রকৃত কৃষকদের মধ্যে বিতরণ না করে ব্যবসায়ীদের মাঝে বিতরণ করেন। এছাড়াও প্রীতম সাহা বিএডিসি সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হয়ে ব্যক্তি মালিকানার ক্ষুদ্র সেচের লাইসেন্স বাবদ ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সেচ নীতিমালা বহির্ভূত ভাবে এক স্কীমের মধ্যে অন্য স্কীমের লাইসেন্স, মটর পাম্প স্থাপন করা হচ্ছে।