ঢাকা , রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ :
র‍্যাব কর্মকর্তার হাতে তিন ফ্রিল্যান্সার অপহৃত ও নির্যাতিত মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার আর্থিক লেনদেনে ব্যবহৃত শতাধিক এজেন্ট সিম ব্লক গাংনীতে ইয়াবা ও ট্যাপেন্টাডলসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার মুজিবনগরে নারী-শিশুসহ ৩০ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনকে হত্যা মামলার আসামি পলাশ কারাগারে, ছবি তুলতে পুলিশের বাধা মুজিবনগরে নারী-শিশুসহ ১৯ বাংলাদেশিকে সীমান্তে ঠেলে দিল বিএসএফ মেহেরপুরে ল্যাব ও ক্লিনিক মালিক এসোসিয়েশনের নবগঠিত কমিটির মতবিনিময় সভা আমঝুপি ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিল ঘিরে সংঘর্ষ গাড়ি ভাংচুর মেহেরপুরের শ‍্যামপুরে ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত  বিএনপির কমিটি গঠনের কোন্দল গড়ালো আদালতে, অতঃপর
বিজ্ঞপ্তি :
শীঘ্রই শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে মেহেরপুর নিউজ এর  বস্তুনিষ্ঠ তথ্যে, চারপাশের খবর" নিয়ে শীঘ্রই আসছে মেহেরপুর নিউজ অনুসন্ধানী সংবাদ
ক্রিপ্টো ও বিকাশে আদায় করা হয় মুক্তিপণ, দাবি করা হয়েছে আরও অর্থ

র‍্যাব কর্মকর্তার হাতে তিন ফ্রিল্যান্সার অপহৃত ও নির্যাতিত

প্রতীকী ছবি
মেহেরপুর জেলার গাংনী র‍্যাব ক্যাম্পের ডিএডি ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে অপহরণ, শারীরিক নির্যাতন এবং মুক্তিপণ আদায়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা ও ক্রিপ্টোকারেন্সি ইউএসডিটি (৫০০ ডলার) আদায় করা হয়। এ ঘটনায় জেলাতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি বাজার এলাকা থেকে জুনাইদ, রোহান ও আলিফ নামের
তিনজন তরুণ ফ্রিল্যান্সারকে র‍্যাবের পোশাকে স্থানীয় দুইজন সোর্সের মাধ্যমে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নেন র‍্যাব কর্মকর্তা হারুন। পরে তাদের গাংনী উপজেলার জুগিন্দা গ্রামের একটি নির্জন মাঠে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়।
৫ লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবিঃ
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, র‍্যাব কর্মকর্তা তাদের জানিয়ে দেন— যদি তারা ৫ লাখ টাকা না দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ‘সাইবার ক্রাইমে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হবে। ভয়ে জর্জরিত অবস্থায় তাদের মোবাইল ফোন থেকে ১৬ হাজার টাকা সরাসরি অভিযুক্তের বিকাশ নম্বরে পাঠাতে বাধ্য করা হয়।
ডিজিটাল মুদ্রা ইউএসডিটিও ছাড় পায়নিঃ
ভুক্তভোগীদের একজনের ফ্রিল্যান্সিং একাউন্টে থাকা ডিজিটাল মুদ্রা—৫০০ ইউএসডিটি (ক্রিপ্টোকারেন্সি) তৎক্ষণাৎ অনলাইনে বিক্রি করে এর সমমূল্য আত্মসাৎ করেন র‍্যাবের ডিএডি ওয়ারেন্ট অফিসার হারুন। এরপর তিনি ভুক্তভোগীদের ছবি তুলে রেখে তাদের হুমকি দিয়ে বলেন, ঈদের পরে আরও এক লাখ টাকা না দিলে ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
পুরনো অভিযোগ নতুন করে সামনেঃ
ঘটনার পর ভুক্তভোগীরা প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, অভিযুক্ত র‍্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পূর্বেও একাধিক অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ জমা পড়েছিল গাংনী র‍্যাব ক্যাম্পে। এছাড়াও জানা গেছে অভিযুক্ত ডিএডি হারুনুর রশিদ তিন মাস আগেও এক ব্যক্তিকে একইভাবে নির্যাতন করে ৩৫ হাজার টাকা ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্টে নিয়েছিলেন। কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন তার ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্ট চেক করলে গত দুই বছরে এভাবে আদায় করা প্রায় কোটি টাকা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যাবে।
গাংনী র‍্যাব ক্যাম্পের গোয়েন্দা শাখার টারজেন পদমর্যাদার সাবেক একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘আমি কিছুদিন গাংনী র‍্যাব ক্যাম্পের গোয়েন্দা শাখায় কাজ করেছি। বর্তমানে আমি আমার মূল কর্মস্থল সেনাবাহিনীতে ফিরে এসেছি। এজন্য এ বিষয়ে আমার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়া ঠিক হবে না। তবে এটা ঠিক হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে পূর্বেও এ ধরনের কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছিল। আমার মোবাইলটি হারিয়ে গিয়েছে। অন্যথায় কিছু স্ক্রিনশট দিতে পারতাম। ‘
মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মারুফ আহমেদ বিজন বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় র‍্যাবের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা মারাত্মক ভাবে ক্ষুণ্ন হবে। দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।’
অভিযুক্ত র‍্যাব কর্মকর্তা ডিএডি হারুনুর রশিদ কে মুঠোফোনে কল দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কয়েকবার প্রতিনিধি ও পত্রিকার নাম জানতে চান। অতঃপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন, আমি বিকালে মেহেরপুর শহরে এসে আপনাকে ফোন দিব। একসাথে বসে চা খেতে খেতে ঘটনার বিস্তারিত টা বলব। ফোনে সেভাবে বিস্তারিত বলা সম্ভব না। পরবর্তীতে রাতে তিনি প্রতিবেদক কে ফোন দিয়ে বলেন ছেলেগুলো অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত এবং কিশোর গ্যাং এর সদস্য। তার এই বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে তিনি সাইফুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক রাজনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
গাংনী র‍্যাব ১২ সিপিসি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কপিল দেব বলেন, ‘আমি মৌখিকভাবে এই অভিযোগটা শুনেছি। কিছু আলামত পেয়েছি। তবে হারুনুর রশিদ র‍্যাবের একজন ডিএডি, সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার র‍্যাংকের কর্মকর্তা। উনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আমার নাই। এজন্য বিষয়টি আমি আমার উর্ধ্বতন মহলে এবং সিও স্যারকে জানিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে উনারা আমার সাথে বিস্তারিত কথা বলে জানিয়েছেন, বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মেহেরপুর জেলা পুলিশ এই ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়েছে।

অনুগ্রহ করে আপনার মতামত আমাদের পাঠান

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

র‍্যাব কর্মকর্তার হাতে তিন ফ্রিল্যান্সার অপহৃত ও নির্যাতিত

ক্রিপ্টো ও বিকাশে আদায় করা হয় মুক্তিপণ, দাবি করা হয়েছে আরও অর্থ

র‍্যাব কর্মকর্তার হাতে তিন ফ্রিল্যান্সার অপহৃত ও নির্যাতিত

আপলোডের সময় : ০২:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
প্রতীকী ছবি
মেহেরপুর জেলার গাংনী র‍্যাব ক্যাম্পের ডিএডি ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে অপহরণ, শারীরিক নির্যাতন এবং মুক্তিপণ আদায়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা ও ক্রিপ্টোকারেন্সি ইউএসডিটি (৫০০ ডলার) আদায় করা হয়। এ ঘটনায় জেলাতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি বাজার এলাকা থেকে জুনাইদ, রোহান ও আলিফ নামের
তিনজন তরুণ ফ্রিল্যান্সারকে র‍্যাবের পোশাকে স্থানীয় দুইজন সোর্সের মাধ্যমে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নেন র‍্যাব কর্মকর্তা হারুন। পরে তাদের গাংনী উপজেলার জুগিন্দা গ্রামের একটি নির্জন মাঠে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়।
৫ লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবিঃ
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, র‍্যাব কর্মকর্তা তাদের জানিয়ে দেন— যদি তারা ৫ লাখ টাকা না দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ‘সাইবার ক্রাইমে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হবে। ভয়ে জর্জরিত অবস্থায় তাদের মোবাইল ফোন থেকে ১৬ হাজার টাকা সরাসরি অভিযুক্তের বিকাশ নম্বরে পাঠাতে বাধ্য করা হয়।
ডিজিটাল মুদ্রা ইউএসডিটিও ছাড় পায়নিঃ
ভুক্তভোগীদের একজনের ফ্রিল্যান্সিং একাউন্টে থাকা ডিজিটাল মুদ্রা—৫০০ ইউএসডিটি (ক্রিপ্টোকারেন্সি) তৎক্ষণাৎ অনলাইনে বিক্রি করে এর সমমূল্য আত্মসাৎ করেন র‍্যাবের ডিএডি ওয়ারেন্ট অফিসার হারুন। এরপর তিনি ভুক্তভোগীদের ছবি তুলে রেখে তাদের হুমকি দিয়ে বলেন, ঈদের পরে আরও এক লাখ টাকা না দিলে ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
পুরনো অভিযোগ নতুন করে সামনেঃ
ঘটনার পর ভুক্তভোগীরা প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, অভিযুক্ত র‍্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পূর্বেও একাধিক অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ জমা পড়েছিল গাংনী র‍্যাব ক্যাম্পে। এছাড়াও জানা গেছে অভিযুক্ত ডিএডি হারুনুর রশিদ তিন মাস আগেও এক ব্যক্তিকে একইভাবে নির্যাতন করে ৩৫ হাজার টাকা ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্টে নিয়েছিলেন। কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন তার ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্ট চেক করলে গত দুই বছরে এভাবে আদায় করা প্রায় কোটি টাকা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যাবে।
গাংনী র‍্যাব ক্যাম্পের গোয়েন্দা শাখার টারজেন পদমর্যাদার সাবেক একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘আমি কিছুদিন গাংনী র‍্যাব ক্যাম্পের গোয়েন্দা শাখায় কাজ করেছি। বর্তমানে আমি আমার মূল কর্মস্থল সেনাবাহিনীতে ফিরে এসেছি। এজন্য এ বিষয়ে আমার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়া ঠিক হবে না। তবে এটা ঠিক হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে পূর্বেও এ ধরনের কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছিল। আমার মোবাইলটি হারিয়ে গিয়েছে। অন্যথায় কিছু স্ক্রিনশট দিতে পারতাম। ‘
মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মারুফ আহমেদ বিজন বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় র‍্যাবের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা মারাত্মক ভাবে ক্ষুণ্ন হবে। দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।’
অভিযুক্ত র‍্যাব কর্মকর্তা ডিএডি হারুনুর রশিদ কে মুঠোফোনে কল দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কয়েকবার প্রতিনিধি ও পত্রিকার নাম জানতে চান। অতঃপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন, আমি বিকালে মেহেরপুর শহরে এসে আপনাকে ফোন দিব। একসাথে বসে চা খেতে খেতে ঘটনার বিস্তারিত টা বলব। ফোনে সেভাবে বিস্তারিত বলা সম্ভব না। পরবর্তীতে রাতে তিনি প্রতিবেদক কে ফোন দিয়ে বলেন ছেলেগুলো অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত এবং কিশোর গ্যাং এর সদস্য। তার এই বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে তিনি সাইফুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক রাজনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
গাংনী র‍্যাব ১২ সিপিসি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কপিল দেব বলেন, ‘আমি মৌখিকভাবে এই অভিযোগটা শুনেছি। কিছু আলামত পেয়েছি। তবে হারুনুর রশিদ র‍্যাবের একজন ডিএডি, সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার র‍্যাংকের কর্মকর্তা। উনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আমার নাই। এজন্য বিষয়টি আমি আমার উর্ধ্বতন মহলে এবং সিও স্যারকে জানিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে উনারা আমার সাথে বিস্তারিত কথা বলে জানিয়েছেন, বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মেহেরপুর জেলা পুলিশ এই ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়েছে।