
মেহেরপুরে এসএসসি পরীক্ষায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ফলাফলে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জেলার নামকরা চারটি সরকারি স্কুলে ফেল ও জিপিএ-৫ এর হতাশাজনক চিত্রে অভিভাবকদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ২৬১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেছে ৫৩ জন। পাশ করেছে ২০৮ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৩৯ জন। পাশের হার ৭৯.৬৯ শতাংশ, অকৃতকার্য ২০.৩১ শতাংশ।
মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়েও চিত্রটা ভিন্ন নয়। ২৭০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ২২১ জন। ফেল করেছে ৪৯ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬০ জন। পাশের হার ৮১.৮৩ শতাংশ। অকৃতকার্য ১৮.১৭ শতাংশ।
গাংনী সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অবস্থা আরও ভয়াবহ। ৬১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেছে ২৮ জন। পাশ করেছে মাত্র ৩৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ২ জন। পাশের হার মাত্র ৫৪.১০ শতাংশ, অকৃতকার্য ৪৫.৯০ শতাংশ— যা জেলা জুড়ে আলোচনার ঝড় তুলেছে।
মুজিবনগর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফলাফলেও সন্তোষ নেই। ৮৭ জনের মধ্যে পাশ করেছে ৭৩ জন। ফেল করেছে ১৪ জন। জিপিএ-৫ মাত্র ৭ জন। পাশের হার ৮৩.৯১ শতাংশ, অকৃতকার্য ১৬.০৯ শতাংশ।
অন্যদিকে জেলার শীর্ষ ফলাফল এবারও ধরে রেখেছে একাধিক প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জিপিএ-৫, পাশের হার ও একাডেমিক প্রস্তুতিতে প্রাইভেট স্কুলগুলো যেভাবে এগিয়ে, সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের এমন ভাটার টান শিক্ষাব্যবস্থার নৈতিক পতনেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা এবং একজন অভিভাবক মোঃ আওয়াল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকারি স্কুলে ক্লাস চলে না, শিক্ষকরা কোচিংয়ে বেশি মনোযোগী। ছাত্রদের পড়াশোনার দিকে নজর নেই বললেই চলে। এই ফলাফল আমাদের দীর্ঘদিনের আশঙ্কাকেই সত্যি করল।’
এ ব্যাপারে একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হযরত আলী বলেন, ‘আমার কাছে এখনও সম্পূর্ণ তথ্য নেই। সব স্কুলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। রোববার বিস্তারিত জানাতে পারব।’
শিক্ষাবিদদের মতে, এখনই জবাবদিহিতা, শিক্ষক মূল্যায়ন এবং একাডেমিক কার্যক্রমে সংস্কার আনা না হলে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কেবল নামেই টিকে থাকবে। ফল বিপর্যয় আসলে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনারই বহিঃপ্রকাশ। তদন্ত, জবাবদিহি এবং কাঠামোগত সংস্কারে এখন আর বিলম্ব করার সুযোগ নেই। নইলে শিক্ষার ভরসাস্থল হিসেবে সরকারি বিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়বে, এমন আশঙ্কাই এখন প্রবল।